বিদ্যালয় এর পরিচিতি
বারপাড়া ফুলমতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
বারপাড়া ফুলমতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ১৯১৯ সালে স্থাপিত হয়। প্রথমে এটি ছিল প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯২৩ সালে বৃটিশ সরকার কর্তৃক এটি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। পর্যায় ক্রমে জুনিয়র হাই স্কুল ও সুদীর্ঘ ৪১ বছর পর ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় হিসেবে সরকারি অনুমোদন প্রাপ্ত হয়।
কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলা ও থানা, পোষ্ট অফিসঃ গৌরীপুরের নিকটবর্তী বারপাড়া গ্রামে বিদ্যালয়টি অবস্থিত। আজ থেকে বহু বছর আগে অবহেলিত ও বঞ্চিত মেয়েদের শিক্ষার প্রয়োজন উপলব্ধি করে শিক্ষানুরাগী ,মানব দরদী ব্যক্তি মোঃ ইসমাইল খাঁন নিজ বসত বাড়িতে প্রথমে বিদ্যালটি প্রতিষ্ঠার সূচনা করেন। শৈশব থেকেই মোঃ ইসমাইল খাঁন গ্রামে মেয়েদের স্কুলের প্রয়োজন অনুভব করতেন। এরাব সব ধ মড়ড়ফ সড়ঃযবৎ ্ ও রিষষ মরাব ুড়ঁ ধ মড়ড়ফ হধঃরড়হ নেপোলিয়ানের এই কথায় দীক্ষিত হয়ে তিনি ১৯১২সালে ছাত্র অবস্থা থেকেই নিজ বসত ঘরেই এলাকার কিছু মেয়েদেরকে উৎসাহ দান করে পড়াতে শুরু করেন। তাঁর বিধাব মা ঐ ঘরটিতেই গ্রামের মহিলা ও শিশুদের কোরআন শরিফ পড়া শিক্ষা দিতেন। তাঁর বিধবা বিদ্যোনুরাগী মা মোসাম্মত ফুলমতি খানমের অনুপ্রেরনাই তাঁকে প্রেরনা ও শক্তি যুগিয়েছে। তাই তাঁর মায়ের নামানুসারে স্কুলটির নামকরন করেছিলেন। যে কোন কাজে অগ্রগতি সাধন ও উন্নতির জন্য যে ইচ্ছা শক্তিই যথেষ্ট তা তিনি প্রমান করে গেছেন। সে সময়ে ছেলেই পাওয়া যেত না ইংরেজি শেখার স্কুলে। আর মেয়েদের চলার গন্ডী তো ছিল বাড়ির চার দেয়ালের ভেতর সীমাবদ্ধ। মেয়েদের বাড়ির বাইরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে আরোপিত শক্ত বিধি-নিষেধ প্রচলিত ছিল । তারপরে আবার পাঠশালায় যেয়ে ইংরেজি ,বাংলা শিখতে হবে, তাতে ছিল আরো বেশি কঠিন অন্তরায়। এমন একটি জটিল সময়ে, অতিশয় কঠিন প্রতিকূল অবস্থায় দৃঢ়চেতা ব্যক্তি ইসমাইল খাঁন নারী শিক্ষা বিস্তার এবং নারী জাগরণের লক্ষ্য নিয়ে নারী শিক্ষার অবলম্বন এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও সক্রিয় হয়ে ওঠেন।নিজেদের বসত ঘরটিকে ছয় কক্ষ বিশিষ্ট করে গড়ে তোলেন। তিনি স্কুলের বিশ্বস্ত দপ্তরী জায়েদ আলীকে নিয়ে পার্বত্য ত্রিপুরার পাহাড় ও বার্মা থেকে গাছ কেটে নিজেরা কাঠের উপর চড়ে নদীপথে বয়ে নিয়ে এসেছেন স্কুল ঘর তৈরির জন্য। তারপর কলিকাতা থেকে করুগেটেট টিন দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে মাথায় বোঝা নিয়ে এনে মজবুত করে ৬ কক্ষ বিশিষ্ট বিদ্যালয় গৃহ নির্মাণ করেন। প্রথমে এ ঘরটিতেই বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করা হয়। চরম প্রতিকুল পরিবেশের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তখনকার সময়ে তিনি অত্যান্ত সাহসের সাথে এই বালিকা বিদ্যালয়ের ভিত স্থাপন করেন। নিজের ঘরে স্কুল ঘর তৈরী করে তিনি মা’কে নিয়ে থাকতেন এক ছোট ছনের ঘরে। পুরো ঘরটিতেই দিনের বেলায় ছাত্রীদের ক্লাশ নেয়া হতো। ১৯২৫ সালে বনেদী পরিবারের কন্যা জোবেদা খাতুনকে বিয়ে করে তিনি এ ঘরেরই একটি কক্ষে তোলেন। এতে কোনো খাট পালং কিছুই ছিলনা। তাঁদের শয়ন কক্ষটিতেও ছাত্রীদের ক্লাশ নেয়া হতো দিনের বেলায়। ফলে দিনে তাঁরা শয়ন কক্ষটি ছেড়ে দিতেন ক্লাশ নেয়ার জন্য। আর রাতে চাটাই বিছিয়ে এবং শীতকালে খড়ের ওপর তোষক বিছিয়ে তাঁরা রাত যাপন করতেন এ কক্ষটিতে। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় একটি নব-দম্পতির এমন নিবিড় একাত্মতা ও ত্যাগের দৃষ্টান্ত শুধু বিরল ঘটনাই নয়,বর্তমানে তা অবিশ্বাস্য রূপকথার কাল্পনিক কাহিনীর মতো মনে হবে।
দৃঢ় প্রাণ ইসমাইল খাঁন এ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় ৮৫ শতাংশ জমি দান করেন। নিজের প্রচেষ্টায় তিনি বিদ্যালয় গৃহ নির্মাণ ও আসবাপত্রের ব্যবস্থা করেন। এ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালে প্রতিষ্ঠাতা ইসমাইল খাঁন নারী শিক্ষার বিরোধী প্রতিবাদী দলের মারমুখী হুমকির সম্মুখীন ও মৃত্যুর মুখোমুখী হয়েছেন বেশ অনেকবার। এ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় এই মহান দানশীল ও সেবাব্রতী ব্যক্তির কঠোর ত্যাগ ও বিশাল সমাজকর্মের মাধ্যমে অবিষ্মরনীয় হয়ে থাকবে।

